রোববার (৯ এপ্রিল) একটি জাতীয় অনলাইন পত্রিকার আলোচনা অনুষ্ঠানে এ যোগ দিয়ে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ঈদের ঠিক পরে ঢাকার কিছু বিপণি বিতান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
“এক বা দুটো বিপণিবিতানকে আমরা মনে করি অনিরাপদ এবং সেখানে আকস্মিক দুর্ঘটনা (ডিজাস্টার) ঘটতে পারে। তাদের বিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
ঢাকার বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজারে আগুন, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণসহ সাম্প্রতিক ঘটনা-দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে ‘ইনসাইড আউট’ এর এবারের পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল– ‘সাম্প্রতিক বিপর্যয়গুলোর কারণ কি প্রশাসনিক ব্যর্থতা?’
সালমান এফ রহমান সরকারের তরফ থেকে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিলেও কোন কোন মার্কেট বন্ধ হবে, সেই নাম বলেননি।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এগুলো মূলত বিপণি বিতান, বড় বিপণি বিতান। দেশে আমরা তাদের পর্যবেক্ষণ করছি, প্রধানত ঢাকায়, চট্টগ্রামে। যেখানে সরকার মনে করছে যে এই মার্কেটগুলো দুর্ঘটনাপ্রবণ, সেখানে নোটিস দেওয়া হয়েছে এবং দোকানদার ও সমিতিকে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের এটা ঠিক করতে হবে’।
“আমি বলছি না যে, আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা পরিদর্শনের পর নোটিস দিয়েছি, এখন দেখব তারা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কি-না।”
কাদের বিষয়ে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখন আমি তাদের নাম বলছি না। কয়েকটি রয়েছে, যাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব এবং যদি তারা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে থাকে আমরা বন্ধ করব।”
তবে বঙ্গবাজারে আগুনের কারণ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে গাউছিয়া মার্কেটকে নোটিস পাঠানোর বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমি পত্রিকায় দেখেছি, এখন আরেকটা মার্কেটও খুবই অনিরাপদ, তা হচ্ছে গাউছিয়া মার্কেট। সেখানেও নোটিস দেওয়া হয়েছে।”
সরকার কি শুধু নোটিস দিয়েই কাজ সারছে? সালমান রহমান বলেন, “প্রশ্ন হচ্ছে, এখন ঈদ। ঈদের ঠিক আগে আপনি এটা বন্ধ করতে পারেন না। ওকে, আমরা ঈদের পরে বন্ধ করব— এটা এমন এক বিষয় তা সমাধান করা কঠিন। তবে, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।
“সরকারি অবকাঠামো যেটা থাকার কথা সরকার সেটা করেছে। কিন্তু যেসব ব্যক্তিকে নোটিস দেওয়া হয়েছে যে, এটা তোমাকে ঠিক করতে হবে এবং তারা সেটা ঠিক করছে না। এক্ষেত্রে সরকার যখন খুবই দৃঢ় ও কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেবে, তখন সেটার সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিণতি থাকে।”
ঈদের পরে বন্ধ করা হবে ঢাকার কিছু মার্কেট: সালমান এফ রহমান
“তখন আপনারা বলবেন, আপনারা কাজ ত্বরান্বিত করুন এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন। সেক্ষেত্রে কি হবে? এখানে বহু লোকের জীবিকা জড়িত। সুতরাং এখানে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজন।”
দেশের কলকারখানাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের গঠিত বহুপক্ষীয় জাতীয় কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যবসায় গোষ্ঠী বেক্সিমকো’র ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমান।
ওই কমিটি সারা দেশে পাঁচ হাজারের বেশি কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সেগুলো শ্রেণিবদ্ধ করেছি, বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ এই রকম। আমরা ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসাবে প্রায় দুইশ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছি এবং তাদেরকে নোটিস পাঠিয়েছি।
“নোটিস পাঠানোর পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে, যদি বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তারা প্রতিকার না করে। এটাতে খুবই কঠোর পদক্ষেপ লাগবে।”
প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে গেলে শ্রমিকের কাজ হারানো এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়গুলো সামনে আসে। সে প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “কথা হচ্ছে, আমরা তাদেরকে বন্ধ করতে চাই না। আমরা চাই, আপনি আরও বেশি বিনিয়োগ করুন এবং প্রতিকার করে এটাকে নিরাপদ করুন। আমরা চাই এটাই তারা করুক।”
সালমান রহমান বলেন, “অনেক দুর্ঘটনার পরে মানুষকে বাধ্য করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। ব্যবসায়ীদেরকে আমি বলছি, এটা করা সম্ভব এবং সেটা পোশাক শিল্পে আমরা প্রমাণ করেছি। সুতরাং পোশাক কারখানা বাইরে দোকান, মার্কেটেও এটা করা যাবে।
“তাদের যুক্তি হচ্ছে, অনেক বিনিয়োগ থাকার ও টাকা ঢালার কারণে আপনি পেরেছেন। আমরা বলছি, সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আপনি অনিরাপদ অবস্থায় কাজ পরিচালনা করতে পারেন না।”
সব মার্কেটে, বিপণি বিতানে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি ‘অনেক বড় কাজ’ হলেও এটা ‘সম্ভব’ বলে মনে করেন সালমান রহমান।
তিনি বলেন, “প্রমাণ হল গার্মেন্টস শিল্প। তাজরীনের আগুন ও রানা প্লাজায় ধসের পর বহু বিনিয়োগ হয়েছে। অনেক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
“এখন মানুষ বলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সবচেয়ে নিরাপদ দেশের মধ্যে রয়েছে। অগ্নি নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত বিভিন্ন সংস্কারের কারণে।”
উপদেষ্টা জানান, তিনি যখন বঙ্গবাজারের পরিস্থিতি দেখতে গেলেন, ব্যবসায়ীরা আগুন লাগার কারণ হিসাবে শুরুতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কথা বলেছেন।
“এখানে আরেকটা বিষয় চলে আসে, মানুষ নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে এবং এটাতে আগুন লাগে। বেশিরভাগ আগুন এই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে হয়ে থাকে।”
বারবার নোটিস দেওয়ার পরও আদতে কোনো কাজ না হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে সালমান রহমান বলেন, “প্রতিকারের ব্যবস্থা ভবনের মালিক বা ভাড়াটেকে নিতে হবে, এটা সরকারের কাজ নয়। সরকার যা করতে পারে তা হল, গিয়ে বন্ধ করে দিল। অবশ্যই এটারও অনেক বিরোধিতা আছে।”ৃ
দুর্ঘটনা রোধ: সব কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশ, উচ্চ পর্যায়ের কমিটি
ঢাকার অবকাঠামোকে নিরাপদ করার কাজকে ‘জটিল’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমরা দ্বিমুখী উদ্যোগ নিচ্ছি। প্রথমটি হচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো শক্তিশালী করা, যাতে কোনো আগুন লাগার ফলে ভালোভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে।
“পাশাপাশি অনিরাপদ এলাকাকে চিহ্নিত করা। সেগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং মালিকদের নোটিস দেওয়া হচ্ছে যে, আপনাকে এটার সমাধান করতে হবে। আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন, মালিক যদি সাড়া না দেয়, ঠিক না করে, তাহলে আপনারা কী করেন?”
ফায়ার সার্ভিসকে শক্তিশালী করা হলেও ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার কথা তুলে ধরেন সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, “আগুন নেভানোর জন্য পানির ব্যবস্থা করতে পারাও একটা কঠিন কাজ। ঢাকায় অতীতে অনেকে পুকুর ছিল, কিন্তু সেগুলো ভরাট করে নির্মাণকাজ করা হয়েছে।”