বাংলাদেশের অবকাঠামো ও লজিস্টিকস উন্নয়ন এবং এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। গতকাল সকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে জাপান রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরির সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এ আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম বিশ্বস্ত অংশীদার জাপান। গত ৫০ বছর ধরে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। বাংলাদেশে মেট্রোরেল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মেঘনা সেতু, মাতারবাগী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের অবদান অনস্বীকার্য।’
বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জাপানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সহজ করতে ভিসাপ্রাপ্তি সহজীকরণ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে দেশটির সহযোগিতা চান এফবিসিসিআই সভাপতি। প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানসহ লজিস্টিক সরবরাহে জাইকা, জেট্রোসহ উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এসব ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে বলে জানান মাহবুবুল আলম।
দীর্ঘ সময় ধরে জাপানের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা এবং অংশীদারত্বের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরো বাড়াতে চাই আমরা। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। দুদেশের যৌথ প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনার আরো সুযোগ রয়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরামর্শ আহ্বান করেন রাষ্ট্রদূত।’
জাপানে জনশক্তি রফতানি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ইয়ামা কিমিনোরি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বাণিজ্যিকভাবে দুদেশের সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরো উন্নত করতে। তবে বেশকিছু বাধাও রয়েছে। বিশেষ করে জনবল আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে জাপান সরকার। পাশাপাশি সেখানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতাও বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশীদের জাপান ভ্রমণ এবং দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন রাষ্ট্রদূত।’
এদিকে, দুপুরে এফবিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এনগুয়েন মান কুং। এ সময় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোয় ভিয়েতনামের শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।
দুদেশের বাণিজ্যের চিত্র তুলে ধরে মাহবুবুল আলম জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্যের আকার ছিলে ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। যার মধ্যে ১ হাজার ১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করেছে ভিয়েতনাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ মাত্র ৯ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি অস্বাভাবিক। বিশাল এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভিয়েতনাম থেকে আরো বেশি বিনিয়োগ চাই আমরা। পাশাপাশি ভিয়েতনামকে বাংলাদেশে থেকে আরো বেশি পণ্য আমদানির আহ্বান জানান তিনি।’
বাংলাদেশে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিনারি ও যন্ত্রাংশ, সামুদ্রিক সম্পদ, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশনস, হালকা প্রকৌশল, পর্যটন, চামড়া, পাট ও বস্ত্রসহ বেশকিছু খাতে ভিয়েতনামের বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয় সৌজন্য সাক্ষাতে।
এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এনগুয়েন মান কুং বলেন, ‘ভিয়েতনামের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এখানে বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাছাড়া দুদেশের অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির মধ্যেও মিল রয়েছে। আমি আশাবাদী, অদূর ভবিষ্যতে ভিয়েতনাম-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে।’
তিনি জানান, চলতি মাসের ২১ তারিখ ভিয়েতনাম ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি থেকে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসবে। এ সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের বাণিজ্য নতুন মাত্রায় পৌঁছবে বলে আশাবাদী এনগুয়েন মান কুং।
অর্থসংবাদ/এসএম