তবে করোনায় অর্থনীতিতে কতটা ক্ষত তৈরি করবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও এ ক্ষত যে শিগগিরই কাটবে না, সে ব্যাপারে একমত অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। অর্থনীতির চাকা সচল করতে করণীয় কী, এ নিয়ে দিয়েছেন নানা পরামর্শ। তাই নিয়ে এই আয়োজন।
করোনাভাইরাস অর্থনীতির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে তা কত দিনে কাটিয়ে ওঠা যাবে, এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রপ্তানি খাত সমস্যায় থাকবেই। সেটা শুধু পোশাক নয়, সবাই।
স্থানীয় বাজারে অনেক পণ্যের উৎপাদন ও কেনাবেচা শুধু পয়লা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের ওপর নির্ভর করে। ঈদবাজারকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা এখনকার সংকট খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারনির্ভর অর্থনীতি অনেক বড়। রাজস্বের সিংহভাগের উৎস অভ্যন্তরীণ কেনাবেচা। যদি ব্যবসা ভালো না হয়, তাহলে রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে। বাধাগ্রস্ত হবে উন্নয়নকাজ।
আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, সমস্যা শুরু হওয়ার পরই একটি পুনরুদ্ধার কর্মসূচি (বেইল আউট প্যাকেজ) নিয়েছে। এটা খুব সহায়তা করবে। চিন্তার বিষয় হলো, ব্যাংককে তার এখনকার গ্রাহকদের ঋণ দিতে হবে। সবাই যেহেতু চাপে থাকবে, ঋণের চাহিদা থাকবে বেশি। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ নিজস্ব তহবিল থেকেই দিতে হবে ব্যাংককে, শুধু পোশাক খাতে মজুরি দিতে দেওয়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল বাদে। করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মানুষের সঞ্চয় কমবে। কেউ কেউ টাকা তুলে বাসায় রাখছেন। ব্যাংকে তারল্য বাড়াতে অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
আমাদের একটা আশঙ্কার বিষয় হলো, একটা ব্যাংক তার পছন্দের গ্রাহককেই বেইল আউটের আওতায় ঋণ দেবে। অপরিচিত গ্রাহক ঋণ পাবেন না। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বড় সমস্যায় পড়ে যাবেন। তাঁদের সিংহভাগ এখন ব্যাংকঋণ পান না, নগদে লেনদেন করেন। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু করাটা জরুরি।
দেশে এখন ব্যাংকঋণের কিস্তি দেওয়া জুন পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে। এখানে ছয় মাসের জন্য সুদটা মওকুফ করা দরকার। এটা ব্যবসায়ীদের দারুণভাবে সহায়তা করবে। এ সময়ে সুদের চাপ বহন করা যেকোনো ব্যবসায়ীর জন্যই কঠিন। ছয় মাসের সুদ এক বছরের কিস্তিতে শোধের সুযোগ দেওয়াও যেতে পারে।
এখন কথা হলো, সরকার যে এত কিছু দেবে, টাকা আসবে কোথা থেকে। আমাদের পরামর্শ হলো, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাড়তি ঋণ তহবিল চাওয়া। পাশাপাশি পুরোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধ এক বছরের জন্য স্থগিতের সুযোগ চাওয়া এবং এ সময়ের সুদ মওকুফ চাওয়া।
আশার দিক হলো, উন্নত দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে এলে তুলনামূলক কম দামের পোশাকের চাহিদা বাড়বে। তখন বাংলাদেশ বাড়তি ক্রয়াদেশ পেতে পারে। এ জন্য ক্রেতাদের কাছে সরকার যে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করছে, সেটা ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা দরকার।
আগামী বাজেটে আমরা করপোরেট কর ও ব্যক্তির আয়করে ছাড় চাই, যাতে কোম্পানি ও সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ কমে।
শামস মাহমুদ : সভাপতি, ডিসিসিআই